বাংলাদেশে ইস্পোর্টস দ্রুত বড় হচ্ছে। এখন অনেক গেমার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করছে। কিন্তু এই প্রবৃদ্ধিকে টেকসই করতে দেশের প্রয়োজন যথাযথ অবকাঠামো ও সহায়তা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে আরও গেমিং সেটআপ, ট্রেনিং সেন্টার ও ইস্পোর্টস প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন। কিন্তু এই বিশাল চাহিদার খুবই সামান্য অংশই এখন পর্যন্ত পূরণ হয়েছে।

ইস্পোর্টসের অগ্রগতিতে চ্যালেঞ্জগুলো
বেশি খরচ ও সীমিত সুযোগ
ইস্পোর্টসে প্রতিযোগিতা করতে শক্তিশালী কম্পিউটার, দ্রুত ইন্টারনেট এবং আলাদা গেমিং স্পেস দরকার, যা অনেক ব্যয়বহুল।
- ভালো গেমিং সেটআপের দাম প্রায় ১ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা।
- দ্রুত ইন্টারনেটের খরচ বেশি, যা অনেকের সামর্থ্যের বাইরে।
- স্পনসরশিপ কম, ব্যবসায়ীরা ইস্পোর্টসে তেমনভাবে বিনিয়োগ করে না।
“যথাযথ গেমিং সরঞ্জাম ছাড়া অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় তাদের আসল সম্ভাবনা দেখাতে পারে না,” বলেছেন ইস্পোর্টস আয়োজক Discovery One।
অনিয়মিত ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ সমস্যা
- অনেক এলাকায় ইন্টারনেট স্লো বা অনিয়মিত।
- ভালো কানেকশন পেতে খেলোয়াড়দের বেশি টাকা খরচ করতে হয়।
- লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অনুশীলন ও টুর্নামেন্ট ব্যাহত হয়।
এই সমস্যাগুলো ইস্পোর্টসে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের গেমারদের জন্য বড় বাধা তৈরি করে।
ইস্পোর্টসের উন্নতিতে সমাধান
সরকার ও ব্যবসায়িক সহায়তা
দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের মতো দেশে ইস্পোর্টসে সরকারি প্রকল্প ও বাণিজ্যিক বিনিয়োগ আছে। বাংলাদেশেও এমন উদ্যোগ প্রয়োজন:
- খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণের জন্য আরও গেমিং সেন্টার।
- সাশ্রয়ী ইন্টারনেট।
- ইস্পোর্টসে বিনিয়োগ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ট্যাক্স সুবিধা।
“যদি ভালো গেমিং হাব তৈরি করা যায়, তাহলে আমাদের খেলোয়াড়রা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করতে পারবে,” বললেন ইস্পোর্টস বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আলিয়ুর রহমান (The Esports Professor নামে পরিচিত)।
শুধু ঢাকায় নয়, দেশজুড়ে ইস্পোর্টস
বর্তমানে বেশিরভাগ টুর্নামেন্ট ঢাকায় হয়, অন্য শহরের খেলোয়াড়দের সুযোগ কম।
- চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনার মতো শহরেও গেমিং সেন্টার দরকার।
- আরও আঞ্চলিক টুর্নামেন্ট নতুন প্রতিভা গড়ে তুলবে।
- গেমিং ক্যাফেগুলোতে ভালো ইন্টারনেট ও সরঞ্জাম দরকার।
“ইস্পোর্টস শুধু ঢাকায় নয়, সব বড় শহরে বাড়াতে হবে,” বলেছেন Discovery One-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা সাদাব হোসেন।
নতুন চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
পেশাদার প্রশিক্ষণের অভাব
ইস্পোর্টস কেবল খেলা নয়; এখানে কৌশল, টিমওয়ার্ক ও প্রশিক্ষণ জরুরি।
- দেশে গেমারদের শেখানোর জন্য খুব কম ইস্পোর্টস কোচ আছে।
- খেলোয়াড়রা তাদের দক্ষতা বাড়ানোর সঠিক গাইডলাইন পায় না।
- নতুন প্রতিভা তৈরির জন্য কোনো ইস্পোর্টস একাডেমি নেই।
ইস্পোর্টসে কর্মসংস্থানের সুযোগ
ইস্পোর্টস শুধু খেলোয়াড়দের জন্য নয়; ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, স্ট্রিমিং, কনটেন্ট তৈরি, কোচিংসহ নানা ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ তৈরি হয়।
- আরও টুর্নামেন্ট মানে আরও আয়োজক, রেফারি ও সম্প্রচারকারীর প্রয়োজন।
- ইউটিউব ও ফেসবুকের মতো স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট তৈরি করে আয় করা যায়।
- শক্তিশালী ইস্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রি হাজারো মানুষের জন্য নতুন ক্যারিয়ারের সুযোগ তৈরি করতে পারে।
“ইস্পোর্টস শুধু শখ নয়, সঠিক সহায়তা পেলে পূর্ণাঙ্গ পেশা হতে পারে,” বললেন FinixOp।
বাংলাদেশের ইস্পোর্টসের ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশের ইস্পোর্টসে বিপুল সম্ভাবনা আছে। আরও বিনিয়োগ ও উন্নত অবকাঠামো পেলে দেশটি শক্তিশালী ইস্পোর্টস রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে।সাশ্রয়ী গেমিং সেটআপ, স্থিতিশীল ইন্টারনেট ও আরও টুর্নামেন্টের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।
প্রশ্ন হলো-বাংলাদেশ কি নিজের ইস্পোর্টস ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করবে?