ডিজিটাল যুগের বিবর্তনের সাথে আসক্তির নতুন নতুন রূপ দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো ডিজিটাল আসক্তি, বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে। এই আধুনিক আসক্তি অতিরিক্ত ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, এবং পাবজি ও ফ্রি ফায়ারের মতো অনলাইন গেমের প্রতি অতিরিক্ত ঝোঁকের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার, বিশেষ করে মহামারির সময়, ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিজিটাল আসক্তির প্রভাব আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।
এটি গেমিং ও ডিজিটাল আসক্তি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরে, যা ইস্পোর্টস কমিউনিটির জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা অতিরিক্ত গেমিং-এর সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করছি এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে স্বাস্থ্যকর গেমিং অভ্যাস গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি।
বাংলাদেশে ডিজিটাল আসক্তির উত্থান
ডিজিটাল আসক্তি এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে ব্যক্তি প্রযুক্তির প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, যা মানসিক ভারসাম্যহীনতা ও সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি করে। বাংলাদেশে বর্তমানে ৯.৩ কোটিরও বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। বিশেষ করে কিশোররা অনলাইন গেম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত হয়ে দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের সামনে কাটাচ্ছে। এই আসক্তি শুধুমাত্র তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে না, বরং শিক্ষাগত ও সামাজিক মূল্যবোধও নষ্ট করে।
বিশ্বজুড়ে পাবজি ও ফ্রি ফায়ারের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে, এবং বাংলাদেশেও বিপুলসংখ্যক তরুণ-তরুণী এই গেম খেলছে। দুর্ভাগ্যবশত, এই গেমের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তির ফলে আত্মহত্যার মতো মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটছে।
ডিজিটাল আসক্তি শুধু প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ নয়; এটি এমন একটি গভীর আসক্তি যা দৈনন্দিন জীবনের ভারসাম্য নষ্ট করে। এটি মূলত তিনটি প্রধান ক্ষেত্রে বিভক্ত: ফোন আসক্তি, ইন্টারনেট আসক্তি, এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আসক্তি।
যদিও ডিজিটাল আসক্তি যে কোনো বয়সের মানুষের হতে পারে, তবে কিশোর-কিশোরীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। বিশেষ করে মহামারির সময় অনলাইন ক্লাসের প্রচলন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা ইন্টারনেটের প্রতি আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ডিজিটাল আসক্তি মানুষের সম্পর্ক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আসক্ত কিশোররা যখন তাদের ডিভাইস থেকে দূরে থাকে, তখন তারা উদ্বেগ, হতাশা, এবং বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি অনুভব করে। অতিরিক্ত স্ক্রিন সময় তাদের মানসিক সুস্থতা, শারীরিক ভঙ্গি, চোখের দৃষ্টি এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
পাবজি ও ফ্রি ফায়ারের প্রভাব
পাবজি ও ফ্রি ফায়ার শুধুমাত্র গেম নয়, এটি একটি সামাজিক প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। এই গেমগুলো তরুণদের ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করছে। কিন্তু এর আসক্তির ফলে শিক্ষাব্যবস্থা, সামাজিক সম্পর্ক এবং মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে একাধিক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে, যার মূল কারণ গেম খেলার সুযোগ না পাওয়া।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ২০১৮ সালে গেমিং আসক্তিকে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিভিন্ন দেশ পাবজি ও ফ্রি ফায়ারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশে এখনো কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি।
সমাধান ও ভবিষ্যৎ করণীয়
ডিজিটাল আসক্তি প্রতিরোধে অভিভাবক, শিক্ষক, নীতিনির্ধারক ও সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। কিছু কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে—
- পরিষ্কার নিয়ম নির্ধারণ: বাচ্চাদের স্ক্রিন টাইমের সীমা নির্ধারণ করা।
- সুস্থ বিনোদন প্রচার: খেলাধুলা, বই পড়া, ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে শিশুদের সম্পৃক্ত করা।
- অনলাইন আচরণ পর্যবেক্ষণ: অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তান কোন ধরনের গেম খেলছে তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা।
- সচেতনতা বৃদ্ধি: সরকারের উচিত ডিজিটাল আসক্তির ঝুঁকি সম্পর্কে প্রচারণা চালানো।
- মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা: যারা ইতিমধ্যে আসক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের জন্য কাউন্সেলিং ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
উপসংহার
বাংলাদেশে পাবজি ও ফ্রি ফায়ার নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আলোচনা চলমান। তবে আসক্তির দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব রোধ করতে হলে শুধুমাত্র নিষেধাজ্ঞাই যথেষ্ট নয়। আমাদের উচিত সম্মিলিতভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং স্বাস্থ্যকর ডিজিটাল অভ্যাস গড়ে তোলা।